Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বন্যাপরবর্তী সবজি চাষে কৃষানিদের করণীয়

কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি
কথায় আছে
Agriculture is the pioneer of all culture and women is the pioneer of agriculture. আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতায় লিখেছেন- “সাম্যের গান গাই-আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই”, “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”। দেশে বর্তমান জনসংখ্যার অনুপাত পুরুষ:মহিলা হলো ১০৬ঃ১০০। মাত্র ১৫% নারী নিজের ইচ্ছায় উপার্জনের স্বাধীনতা পান। জমির মালিকানায় নারীর মাত্র ১৯%। নারী শ্রম শক্তির মধ্যে ৬৮ শতাংশই কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতের সাথে জড়িত। কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে কৃষিকাজে সবচেয়ে বেশি নারী নিয়োজিত রয়েছেন। বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনের সব ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, নারী পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন করা, নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরির কথা রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক তথ্য মতে, প্রতি বছর গড়ে দুই লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে যুক্ত হচ্ছেন। আসলেই এদেশের নারীরা খরা বন্যা সহ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পুরুষের কাধে কাধ মিলিয়ে সমান তালে মোকাবেলা করে যাচ্ছে।


ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রতি বছরই দেশের কোথাও না কোথাও কম বেশি বন্যা দেখা দেয়। কখনও কখনও আগাম বন্যার কারণে মাঠের বোরো, আউশ, পাট, রোপা আমন বীজতলা, বোনা আমন ও শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। আবার কখনও দেখা দেয় ঢল বন্যা আবার কখনও নাবি বন্যা। হঠাৎ বন্যা মারাত্মক আকার ধারণ করলে মাঠ ফসল ছাড়াও ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিরোধ-প্রতিকার করা সম্ভব না হলেও কিছু বিশেষ প্রযুক্তি পদ্ধতি অনুসরণ করলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেয়া যায়। কৃষি মন্ত্রণালয় বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।


আজকাল হৃদরোগ, চর্মরোগ ও বহুমূত্র রোগের মতো নানা ধরনের রোগীকে ওষুধের পরিবর্তে পথ্য হিসেবে বেশি করে শাকসবজি খাবার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তারেরাও। আমরা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দামি বা সস্তা যে ধরনের খাবারই খাই না কেন তার মধ্যে শাকসবজির গুরুত্ব অনেক বেশি। আমরা প্রতিদিনই কোন না কোনভাবে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খেয়ে থাকি। কেননা শাকসবজিতে সব ধরনেরই খাদ্য উপাদান আছে। তার মধ্যে ভিটামিন ও খনিজ লবণ উল্লেখযোগ্য যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেহে ভিটামিন ও খনিজ লবণের যে চাহিদা তার সবটুকুই প্রায় শাকসবজি থেকেই পূরণ হয়। আবার চোখের সমস্যার জন্য সবুজ বা রঙিন শাকসবজি অত্যন্ত উপকারী। তাহলে শুধু খাবার হিসেবেই নয়, ওষুধ, পথ্য, পুষ্টি ও সুষম খাদ্যের জন্য আমাদের প্রতিদিনই হরেক রকম শাকসবজি খাওয়ার জন্য কিছু না কিছু শাকসবজি উৎপাদন করা প্রয়োজন। এতে আমাদের পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারবে।


রবি বা শীতকালের জন্য যেসব সবজির চারা তৈরি করতে হবে সেগুলো সাধারণত ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, টমেটো, বেগুন ও লাউ এসব। উন্নত জাতের সবজি চারার অভাবে অনেকেই সবজি চাষ করতে পারেন না অথচ একটু পরিশ্রম করলে নিজের চারা নিজেই তৈরি করা যায়। শাকসবজি অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির ফসল। সেজন্য একটু যতেœর সাথে এর চাষ করতে হয়। সবজির জমি খুব মিহি ও ঝুরঝুরেভাবে তৈরি করতে হবে। জমি সমতলভাবে সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব বা আবর্জনা পচা সার দিতে হবে। জমিতে রসের অভাব থাকলে সেচ দিয়ে ‘জো‘ এলে তারপর চাষ মই দিয়ে জমি তৈরি করে বীজ বুনতে হবে। আবার অনেক রকমের সবজি মাদাতে লাগাতে হয়। এগুলোর প্যাকেটে চারা তৈরি করে নির্দিষ্ট দূরত্বে মাদা তৈরি করে চারা লাগাতে হয়। চারা লাগানোর পর গাছগুলো বড় হতে থাকলে  বাউনি বা মাচা তৈরি করে দিতে হয়। তবে মাদাতে চারা লাগানোর আগে পরিমাণ মতো সুষম হারে অন্যান্য রাসায়নিক সারও দিতে হবে।


ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা এসবের জন্য  বিঘা প্রতি গোবর ১ টন, ইউরিয়া ৫০ কেজি, টিএসপি ৩৫ কেজি, এমওপি ৪০ কেজি। আর এ ক্ষেত্রে সব ধরনের সার এবং ইউরিয়া ও এমওপি অর্ধেক জমি তৈরির সময় এবং বাকি সার ৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে।


চারা তৈরির জন্য আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হলে-
*প্রথমে চারা তৈরির জন্য স্থান নির্বাচন করে নিতে হবে।
*সূর্যের আলো-বাতাস পায় এবং পানি সেচ-নিকাশের সু-ব্যবস্থা আছে এমন জায়গা নির্বাচন করে নিতে হবে।
*বীজতলার জন্য মাটি দোঁ-আশ ও বেলে দোঁ-আশ হলে চারা উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত হবে।
*আধুনিক পদ্ধতির জন্য বেড তৈরি করে নিতে হবে।
*প্রতিটি বেডের মাপ হবে ৫মিটার ১ মিটার, তবে জমির প্রকার ভেদে শুধুমাত্র প্রস্থের মাপ ১ মিটার রেখে দৈর্ঘ্য প্রয়োজনমত কম/বেশি করতে পারেন।
*প্রতিটি বেডের চারপাশে ৮-১০ ইঞ্চি চওড়া নালা রাখতে হবে। এতে পানি সেচ-নিকাশ ছাড়াও যত্ন-পরিচর্যা কাজ সুবিধে হবে।
*প্রতি বেডে ২০ কেজি পচা গোবর বা আবর্জনা সার, ৫ কেজি ছাই, টিএসপি ২০০ গ্রাম ও ১০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে।
এবার ৫মিটার ১ মিটার মাপের একটি আদর্শ বীজতলায় ফুলকপি ও বাঁধাকপির জন্য ১০ গ্রাম, ওলকপির জন্য - ১০ গ্রাম, টমেটোর জন্য- ৫ গ্রাম, বেগুনের জন্য- ১০ গ্রাম বীজ লাগবে। এছাড়া অন্যান্য শীতকালীন সবজির জন্য সাধারণত ৫-১০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।


চারা গজানোর পর করণীয়
*বৃষ্টির পানি যাতে বীজতলায় জমতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বীজতলার চারা দুপুর বেলায় অতিরিক্ত রোদ থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের চাটাই বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
*বীজতলায় প্রয়োজনে হালকাভাবে ঝাঁঝরি দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে। সেচ দেয়ার পর মাটির উপর চটা পড়লে চটাগুলো ভেঙে দিতে হবে। এতে আলো-বাতাস ঠিকমত চলাচল করবে, চারার শিকড় মজবুত ও শক্ত হবে।
*বীজতলা সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। আগাছা বের হলে তা দ্রæত পরিষ্কার করে দিতে হবে। চারা অবস্থায় সবজির কাণ্ড ও শিকড় খুবই নরম থাকে। আগাছা পরিষ্কারের সময় সাবধানে নিড়ানি ব্যবহার করতে হবে যাতে নিড়ানির আঘাতে কাণ্ড ও শিকড় ছিঁড়ে না যায়। আগাছা থাকলে রোগ ও পোকার আক্রমণ বেশি হয়। রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হলে তা  দ্রæত দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
*চারার বয়স ২৫-৩০ দিন হলে যত্ন সহকারে চারা উঠাতে হবে। চারা উঠানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে চারার শিকড় ও কাণ্ড ছিঁড়ে না যায়। দুপুর বেলা সবজির চারা উঠানো এবং লাগানো ঠিক নয়।

 

বন্যা মোকাবেলায় বন্যা পরবর্তী সময়ে বিশেষ বিশেষ করণীয়
*যাদের শীতকালীন সবজির চারা নষ্ট হয়েছে তাদেরকে আবার চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
*যারা আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করেছিলেন তাদের সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট না হয়ে থাকলে জমিতে জো আসার পর ছাই ছিটিয়ে হালকাভাবে নিড়িয়ে উপরি সার প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে।
*দ্রুত বর্ধনশীল সবজি নির্বাচনে মুলা, লালশাক, ধনেপাতা, শর্ষেশাক, পালংশাক এবং লাউ ও কুমড়া (ঘন করে মাদা তৈরি করে বীজ বপন করে) উৎপাদন করে শাক হিসেবে বাজারে বিক্রি করে প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব।
*পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে পাতাজাতীয় সবজি যেমন গিমা কলমি, লালশাক, ডাঁটাশাক, পালংশাক, এ সবের চাষ করা যেতে পারে।
*বন্যায় শীতকালীন সবজি ক্ষেতসহ প্রচুর পরিমাণে বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বাড়ির আঙ্গিনায় বাঁধের ধারে বা অন্য কোন উঁচু জায়গায় সবজির চারা উৎপাদন করতে পারেন।  শুকনো জায়গা না থাকলে টব, মাটির চাড়ি, কাঠের ব্ক্সা, কাটা ড্রাম ও পুরনো টিনে কিছু মাটিসহ জৈব সার  মিশিয়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, মরিচ এ সবের বীজ বুনে চারা উৎপাদন করা যায়।
*ভাসমান কচুরিপানার স্তূপ কলার ভেলার ওপর সামান্য মাটি দিয়ে লাউ, শিম, এর বীজ বপন করা যেতে পারে। পানি নেমে যাওয়ার পর ওই স্তূপটি পছন্দ মতো জায়গায় বসিয়ে মাচা করে দিতে হবে।
*আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলি জমির রস কমানোর জন্য মাটি আলগা করে ছাই মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া সামান্য ইউরিয়া ও পটাশ সার প্রয়োগ করা যায়।
*বন্যার পানি সহনশীল লতিরাজ কচুর চাষ করা যায়। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলি জমির রস কমানোর জন্য মাটি আলগা করে শুকনা ছাই মিশিয়ে প্রয়োজনে অল্প মাত্রায় ইউরিয়া ও পটাশ প্রয়োগ করা যায়;
*এসব এলাকায় খেসারি ডাল চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে তাই বীজ সংগ্রহ করে প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে উপযুক্ত সময়ে বপন করা যায়।
*এসব এলাকায় ভুট্টা চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই   আমন ধান কাটার পর ভুট্টা ফসল চাষ করা সম্ভব ।
*তরমুজ, ফুটি, মুগ চাষের জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে যাতে কোন জমি পতিত না থাকে।
*চরা অঞ্চলসহ অন্যান্য উপযুক্ত এলকায় মিষ্টি আলু, তরমুজ, বাঙ্গি, চীনা বাদাম, মরিচসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করুন। চর অঞ্চলে স্থানীয় বোরো চাষের লক্ষ্যে আগাম প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
বর্তমানে এ ক্ষেত্রে মহিলাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়ার ফলে কৃষি কাজে নেমে অনেক মহিলাই সমাজে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, যাদের অনেকেরই খবর আমরা রেডিও,  টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনেছি। শুধু তাই নয় এ ধরনের কাজ করে অনেক মা-বোনই জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। আমাদের দেশের মা-বোনেরা যদি একটু উদ্যোগ ও প্রবল ইচ্ছা শক্তি নিয়ে কৃষি কাজে এগিয়ে আসেন, তবে প্রাকৃতিক এবং সামাজিক দুর্যোগসমুহ মোকাবেলা করে তারা তাদের পারিবারিক আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হবেন।

আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী, মোবাইল : ০১৮১৯৯২২৬১৩, ই-মেইল : rajshahi@ais.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon